নক্ষত্র

জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে নক্ষত্র হল চন্দ্রপথের ২৭ টি ভাগের প্রতিটির নাম। সূর্যের গতিপথকে যেমন ১২ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে রাশি তেমনি চন্দ্রপথকে ২৭ ভাগে ভাগ করে প্রতি ভাগের নাম রাখা হয়েছে নক্ষত্র। বিভিন্ন দেশে এই চন্দ্রনিবাসসমূহের নাম বিভিন্ন। সাধারণত দেখা যায় ২.২৫ নক্ষত্রে এক রাশি হয়।





নক্ষত্র ২৭ টি। ক্রমানুসারে ২৭ টি নামগুলি হলো:

(১) অশ্বিনী (২) ভরণী (৩) কৃত্তিকা (৪) রোহিণী (৫) মৃগশিরা (৬) আর্দ্রা (৭) পুনর্বসু (৮) পুষ্যা (৯) অশ্লেষা (১০) মঘা (১১) পূর্বফাল্গুনি (১২)উত্তরফাল্গুনি (১৩) হস্তা (১৪) চিত্রা (১৫) স্বাতী (১৬) বিশাখা (১৭) অনুরাধা (১৮) জ্যেষ্ঠা (১৯) মূলা (২০) পূর্বাষাঢ়া (২১) উত্তরাষাঢ়া (২২) শ্রবণা (২৩) ধনিষ্ঠা (২৪) শতভিষা (২৫) পূর্বভাদ্রপদ (২৬) উত্তরভাদ্রপদ (২৭) রেবতী । এছাড়াও অভিজিৎ নামেও আরও একটি নক্ষত্র আছে। উত্তরাষাঢ়ার শেষ পাদ এবং শ্রবণার প্রথম পঞ্চদশাংশ ব্যাপীয়া অভিজিৎ নক্ষত্র গণণা করা হয়। অর্থাৎ: – ৯ রাশি ৬ অংশ ৪০ কলা থেকে ৯ রাশি ১০ অংশ ৫৩ কলা ২০ বিকলা পর্য্যন্ত। এখন নক্ষত্র বলতে কি বুঝব? মূলত চন্দ্র রাশিচক্রের (প্রকৃতপক্ষে চান্দ্রমার্গের) ৩৬০ডিগ্রী ঘুরে আসে। এই চন্দ্র রাশিচক্রের ভাগ ২৭ টি। প্রত্যেকের ব্যবধান হোল ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট । এই এক একটি ভাগকে নক্ষত্র বলা হয়। এই ভাগের প্রধান উজ্জ্বল তারাকে যোগতারা বলা হয়। কোন দিন কোন নক্ষত্র বললে বুঝতে হবে চন্দ্রের অবস্থান নক্ষত্রের ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট সীমানার মধ্যে। করণ: – করণ হোল তিথির ১/২ বা অর্ধাংশ। যে কোন তিথির প্রথম অর্ধাংশ একটি করণ, দ্বিতীয় অর্ধাংশ অন্য একটি করণ। সুতরাং ৩০টি তিথিতে ৬০ টি করণ। করণের নামসমূহ: – (১) বব (২) বালব (৩) কৌলব (৪) তৈতিল (৫) গর (৬) বণিজ (৭) বিস্টি (৮) শকুনি (৯) চতুষ্পাদ (১০) নাগ (১১) কিন্তুঘ্ন প্রথম ৭টি করণ চরকরণ বা সাধারণকরণ। পরের ৪টি স্থিরিকরণ। ৪টি স্থিরিকরণ বিশেষ বিশেষ তিথির বিশেষ বিশেষ অর্ধাংশে প্রযোজ্য। কৃষ্ণচতুর্দশীতে-১টি, অমাবস্যায় -২টি, শুক্ল প্রতিপদে- ১টি । এই ৪টি স্থিরিকরণ । এই ৪টি বাদ দিলে থাকে ৫৬ টি করণ। এই ৫৬ টি করণের প্রথম ৭টি চরণাকরণের পৌনঃপুনিক (জবপঁৎৎরহম) মাত্র। যোগ: – পঞ্জিকার শেষের অঙ্গটি হলো যোগ। সূর্য্য ও চন্দ্রের দুইয়ের নিরয়ণস্ফুট (Longitude) যা দেওয়া থাকে তাদের যোগফলকে ১৩.৩৩ দিয়ে ভাগ করলে যা থাকবে – তাই যোগ। তিথি ও নক্ষত্রের মত যোগেরও অন্তকাল থাকে। যোগ ২৭ টি: – (ক্রমানুসারে) ১। বিষ্কুম্ভ ২। প্রীতি ৩। আয়ুষ্মান ৪। সৌভাগ্য ৫। শোভন ৬। অতিগন্ড ৭। সুকর্মা ৮। ধৃতি ৯। শূল ১০। গন্ড ১১। বৃদ্ধি ১২। ধ্রুব ১৩। ব্যাঘাত ১৪। হর্ষণ ১৫। বজ্র ১৬। অসৃক ১৭। ব্যাতিপাত ১৮। বরীয়ান ১৯। পরিঘ ২০। শিব ২১। সিদ্ধ ২২। সাধ্য ২৩। শুভ ২৪। শুক্র (শুক্ল) ২৫। ব্রহ্ম ২৬।ইন্দ্র ২৭। বৈধৃতি এগুলো গেল পঞ্জিকার সময় গণণা। এবার আসি পূজার সময় নিরূপণ। ১ অনুপল= ০.০০৪ সেকেন্ড। ৬০ অনুপল= ১ বিপল=০.২৫ সেকেন্ড। ৬০ বিপল= ১ পল=১৫ সেকেন্ড। ৯৬ পল= ১ দন্ড = ২৪ মিঃ। ২.৫ দন্ড =১হোরা =১ আওয়ার বা ঘন্টা। ৭.৫ দন্ড = ১ প্রহর = ৩ আওয়ার বা ঘন্টা। ৮ প্রহর = ১ দিবস (দিন+রাত্রি) বা অহোরাত্র। হোরা থেকে অহোরাত্র এসেছে। এখানে একটা জিনিস লক্ষণীয় যে ইং hour এবং হোরা শব্দটির সাদৃশ্য।

চাঁদ প্রত্যেক তিথিতে একেকটি নক্ষত্রের কাছে অবস্থান করে। পূর্ণিমার দিন চাঁদ যে নক্ষত্রে অবস্থান করে তদনুসারে মাসের নাম বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় ইত্যাদি রাখা হয়েছে। প্রত্যেক নক্ষত্রের আকাশস্থানের পরিমাণ (৩৬০ / ২৭ = ১৩ ডিগ্রী ২০ মিনিট)। প্রতিটি নক্ষত্রের একটি বিশেষ তারাকে (সাধারণত উজ্জ্বলতম তারাকে) নির্দিষ্ট করা হয় এবং একে যোগতারা বলা হয়। কোন নক্ষত্রের আদিবিন্দু থেকে ঐ নক্ষত্রের যোগতারা পর্যন্ত ভূকক্ষের অংশকে উক্ত নক্ষত্রের ভোগ বরা হয়। শাস্ত্রে নক্ষত্রের অবস্থান এবং যোগতারা নির্দিষ্ট করা আছে। তাই প্রত্যেক নক্ষত্রের ভোগ নির্দিষ্ট। এর কোন পরিবর্তন হয়না।

বার ও তিথি

বার বা বাসর:
সোমবার থেকে রবিবার বা সোমবাসর থেকে রবিবাসর। এই প্রত্যেকটি নাম গ্রহ থেকে এসেছে। রবি- সূর্য্য, সোম- চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি বা গুরু, শুক্র বা ভার্গব, শনি।

তিথি:

সূর্য্যের সঙ্গে সংযোগের হিসাবে চান্দ্রমাসের গড় মান-২৯.৫৩ দিন। চান্দ্রমাস কাকে বলা হয়? এক অমাবস্যা থেকে ঠিক পরের অমাবস্যা পর্য্যন্ত সময়কে সাধারণত ১ চান্দ্রমাস বলা হয়। চান্দ্রমাসের নামকরণ কিভাবে হয়? আমরা জানি ১২ টি সৌরমাস। যথা:- ১. বৈশাখ( বিশাখা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ২. জ্যৈষ্ঠ(জ্যেষ্ঠা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৩.আষাঢ়(পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৪. শ্রাবণ (শ্রবণা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৫.ভাদ্র (পূর্বভাদ্রপদ নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৬. আশ্বিন (অশ্বিনী নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৭.কার্ত্তিক ( কৃত্তিকা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৮. অগ্রহায়ণ ( অপর নাম- মার্গশীর্ষ, মৃগশিরা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ৯. পৌষ (পুষ্যা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ১০. মাঘ (মঘা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ১১.ফাল্গুন (পূর্বফল্গুনি নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) ১২.চৈত্র (চিত্রা নক্ষত্র থেকে নাম এসেছে) । আমরা বৈশাখ থেকে আরম্ভ করি। এই মাসের কোন না কোন দিনে অমাবস্যা পড়বে। এই অমাবস্যা থেকে পরের অমাবস্যা পর্যন্ত ১ চান্দ্র বৈশাখ বলা হয়। এইভাবে ১২টি চান্দ্রমাস হবে। যদি একই মাসে ২ টি অমাবস্যা পড়ে, তবে সেই চান্দ্রমাস মলমাস হিসাবে গণ্য হবে। আগেই বলা হয়েছে যে, এক চান্দ্রমাসের মান ২৯.৫৩ দিন। ২৯.৫৩ কে পূর্ণসংখ্যাতে রুপান্তরিত করলে হয় ৩০। এই ৩০ দিনকে ৩০ টি সমান ভাগে ভাগ করে, এক একটি অংশকে বলা হয় তিথি। তিথি হলো ১ চান্দ্রদিন। এবার প্রশ্ন কেন? অমাবস্যা কে আদি তিথি বা ১ম দিন ধরা হয়। যখন চন্দ্র ও সূর্য্যের একই সরলরেখায় মিলন হয় তখন অমাবস্যা হয় । সুতরাং তিথি= ১ চান্দ্রদিন। অমাবস্যার পরের দিন প্রতিপদ বা প্রথমা এবং শুরু শুক্লপক্ষ। সুতরাং অমাবস্যার পরের দিন শুক্লপক্ষের প্রতিপদ বা প্রথমা। চন্দ্র, সূর্য্যের সাপেক্ষে ১২ ডিগ্রী কৌণিক দূরত্ব (angular distance) অতিক্রম করলেই প্রতিপদ বা প্রথমার শেষ এবং শুক্লা দ্বিতীয়ার আরম্ভ। পক্ষ ২টি। শুক্লপক্ষ এবং কৃষ্ণপক্ষ। পক্ষ সাধারণত ১৫ দিনের। অমাবস্যা থেকে পরের ১৫ দিন পর পূর্ণিমা। এই ১৫ দিন শুক্লপক্ষ । আবার পূর্ণিমা থেকে পরের ১৫ দিন পর অমাবস্যা। এই ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষ। সুতরাং ১ চান্দ্রমাসের ১ম ১৫ দিন শুক্লপক্ষীয় এবং ২য় ১৫ দিন কৃষ্ণপক্ষীয়। তিথি, যে কোন দিনাঙ্কের যে কোন সময়ে শুরু হতে পারে; দিনে অথবা রাত্রিতে। সাধারণত পঞ্জিকার যে কোন দিনাঙ্কের সূর্য্যোদয়ের সময় যে তিথি চলছে সেটাই সেই সৌরদিনের তিথি হিসাবে গণ্য হবে। তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘণ্টা পর্য্যন্ত হতে পারে। এর কারণ চন্দ্রের জটিল গতি। চন্দ্র পৃথিবীকে কেন্দ্র করে এক কক্ষপথে ঘুরে চলেছে, এটা আমরা সবাই জানি। কক্ষপথটি কিন্তু উপবৃত্তাকার (Elliptical)| যার ফলে চন্দ্রের গতি সেই কক্ষপথে সব জায়গায় সমান নয়। কখনো ধীরে, কখনো জোরে।–আর সেই জন্যেই তিথির মান ২০ থেকে ২৭ ঘণ্টা পর্য্যন্ত হয়। সুতরাং, পাঁজির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হোল তিথি ।